শীতের জন্য কোন ফেসওয়াস ভালো | Which facewash is good for winter?

শীতের জন্য সেরা ফেসওয়াশ, ফেসওয়াশ,ত্বক,Health & Beauty Tips,ক্রিম,শীত,


চলছে শীতকাল। আর এই সময়ে ত্বককে নরম এবং কোমল রাখা নিশ্চিত করতে ভালো ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে সেরামানের শীতের ফেসওয়াশ। 


তাছাড়া প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই শীতকালে শুষ্ক ত্বক একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে বেছে বেছে ময়শ্চারাইজিং ক্লিনজার ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি। 


সেই সুবাদে দরকার শীতের জন্য কোন ফেসওয়াস ভালো, এসব ফেসওয়াশে কি কি উপকারিতা রয়েছে সে-সম্পর্কে জেনে রাখা। চলুন বিস্তারিত আলোচনায় ফোকাস করি। 


১. ভিটামিন সি ফোমিং ব্রাইটনিং ফেসওয়াশ


এই ভিটামিন সি ফোমিং ব্রাইটনিং ফেসওয়াশটি মূলত ১২০ মিলিগ্রামের দারুণ একটি ফেসওয়াশ। যা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ভিটামিন সি, অ্যালোভেরা, হলুদ, লিকোরিস, গ্লিসারিন এবং সাইপ্রেস এসেনশিয়াল অয়েল। ফেসওয়াশটি ব্যবহারে আপনি পাবেন: 


  • ত্বকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি দূর করার সুযোগ 

  • ত্বককে হাইড্রেট করা এবং এটিকে নরম করা সুবিধা

  • ফেসওয়াশটির নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের অতিরিক্ত তেল, ময়লা এবং দূষক পরিষ্কার হতে সাহায্য করবে

  • এটি ত্বকের ছিদ্রের গভীরে পৌঁছে এবং আপনার ত্বককে সতেজ, পরিষ্কার এবং ব্রণ-মুক্ত করে তুলবে

  • ত্বকে থাকা কালো দাগ এবং পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করবে

  • ত্বকের গ্লো বাড়িয়ে দেবে 


২. ভিটামিন সি ব্রাইটনিং ফেসওয়াশ

এই ভিটামিন সি ব্রাইটনিং ফেসওয়াশ নামক শীতকালের ফেসওয়াশটির নিট ওজন হলো ১০০ গ্রাম। যারা শীতের জন্য কোন ফেসওয়াস ভালো তা ভেবে ভেবে চিন্তায় পড়ে গেছেন তারা এই ফেসওয়াশটি ট্রাই করতে পারেন। 


ত্বকের পুষ্টি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং উজ্জ্বলতা নিশ্চিত করতে এতে ব্যবহার করা হয়েছে ভিটামিন সি, অ্যালোভেরা, গ্লিসারিন, সাইপ্রেস তেল, হলুদ, জাফরান, কমলার খোসা, নিম পাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফলে: 


  • এটি ব্যবহার করলে তা আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় রেখে ত্বক থেকে ময়লা এবং দাগ দূর করবে

  • ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলবে

  • নিয়মিত ব্যবহার করলে এটি ত্বকের ফ্রি র‍্যাডিক্যাল ক্ষতির বিরুদ্ধে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে 

  • ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন এবং গাঢ় দাগ কমাতে সাহায্য করবে

  • নিয়মিত ব্যবহার ত্বককে গভীরভাবে পুষ্ট করে তুলবে

  • প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিংজেন্ট হিসেবে ত্বকে কাজ করবে

  • ত্বকের অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে 


৩. অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বুস্ট ফোমিং ফেসওয়াশ

ফেসওয়াশ হিসাবে যেকোনো ধরণের ফোমিং ফেসওয়াশ কিন্তু যথেষ্ট ভালো। কারণ ধোঁয়ার সময় যত বেশি ফেনা তৈরি হবে এবং ফোমি হবে ততবেশি ত্বক পরিষ্কার হওয়ার চান্স থাকবে। 


তেমনই একটি ফেসওয়াশ হলো এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বুস্ট ফোমিং ফেসওয়াশ। এক একটি বুস্ট ফেসওয়াশে আপনি পাবেন ১২০ মিলিগ্রামের মতো ফেসওয়াশ। 


যেখানে থাকবে ল্যাকটিক অ্যাসিড, আখের রস, কাঁচা পেঁপে, লেবুর খোসার পেস্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অ্যালোভেরার দারুণ ম্যাজিক মিক্স। ফলে: 


  • ফেসওয়াশটি ত্বকের এক্সফোলিয়েশনে সাহায্য করে এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে

  • মুখের ড্রাই স্কিন দূর করতে সাহায্য করে, ত্বককে নরম ও মসৃণ করে তোলে

  • নিয়মিত ব্যবহার পিগমেন্টেড ত্বক সুস্থ করে তোলে 

  • ত্বকের যেকোনো কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে

  • এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক্টিভিটি ত্বকের স্বাভাবিক রূপ বজায় রাখে

  • ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করে


৪. অ্যাডভান্সড রাইস ওয়াটার ফেসওয়াশ


রাইস ওয়াটার বা চাউল ধোঁয়ার পানি ত্বকে এপ্লাই করলে গ্লাস স্কিন পাওয়া যায় সহজে। আর সাথে যদি থাকে বরই, আকাই বেরির মতো ত্বকের সুস্থতায় অবদান রাখা গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। 


ঠিক তেমনই একটি অল ইন ওয়ান ফেসওয়াশ হলো এই অ্যাডভান্সড রাইস ওয়াটার ফেসওয়াশ। যদি আপনি নিয়মিতভাবে এই অ্যাডভান্সড রাইস ওয়াটার ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন তাহলে: 


  • আপনার ত্বস আলতোভাবে এক্সফোলিয়েট হতে থাকবে

  • মৃত ত্বকের কোষগুলিকে পরিষ্কার হয়ে যাবে

  • কালো দাগ এবং পিগমেন্টেশন দূর হবে

  • ত্বককে অনেক সময় ধরে হাইড্রেটেড এবং কোমল রাখবে

  • ফ্রিতে র‌্যাডিক্যাল ক্ষতি এবং UV রশ্মির বিরুদ্ধে ত্বককে রক্ষা করবে

  • ত্বককে তাৎক্ষণিকভাবে সতেজ হতে সাহায্য করে


৫. ইয়ুথফুল গ্লো ফেসওয়াশ


ত্বকের গ্লো বাড়ানোর জন্য যারা শীতের জন্য কোন ফেসওয়াস ভালো ভেবে অস্থির হচ্ছেন তারা এই ইয়ুথফুল গ্লো ফেসওয়াশটি ব্যবহার করতে পারেন। 


জাফরান, ওট মিল্ক এবং পীচের রসের সাহায্যে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় এই ফেসওয়াশটি। মুখের উপরিভাগ থেকে প্রাকৃতিক তেল বাদ দিয়ে আপনার মুখকে পরিষ্কার করে তোলার পাশাপাশি এটি: 


  • আপনার ত্বককে সবসময় পুষ্ট রাখবে 

  • বলিরেখার চেহারা ভালোই ঠিক করে তুলবে

  • ত্বকের ছিদ্রে আটকে থাকা ময়লা-আবর্জনা দূর করতে সাহায্য করবে 

  • ত্বকে একটি গ্লোয়ি ভাব আনবে এবং আপনাকে যথেষ্ট ইয়াং দেখাবে 


৬. ন্যাচারাল ভিটামিন সি ফোমিং ফেসওয়াশ


১২০ মিলিগ্রামের এই ন্যাচারাল ভিটামিন সি ফোমিং ফেসওয়াশটি ভিটামিন সি, অ্যালোভেরা, হলুদ, লিকোরিস, গ্লিসারিন এবং সাইপ্রেস এসেনশিয়াল অয়েলের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। যা ত্বকের: 


  • অতিরিক্ত তেল, ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে

  • ত্বকে ভিটামিন সি এর অভাব দূর করবে

  • ফ্রি র‌্যাডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি দূর করবে

  • সর্বোপরি ত্বককে হাইড্রেট করবে


শীতকালে ফেসওয়াশ ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা


কেবল শীতের জন্য কোন ফেসওয়াস ভালো তা নিয়ে আলোচনা করলেই চলবে না। বরং এর পাশাপাশি জানতে হবে শীতকালে ফেসওয়াশ ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা। বিশেষ করে জানতে হবে: 


১. স্কিনের জন্য সঠিক ফেসওয়াশ বাছাই করে নেওয়াটা জরুরি। তবে শীতকালে যেকোনো স্কিনের জন্যই হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। 


যদিও ব্যবহৃত ফেসওয়াশের ধরন ত্বকের ধরন অনুসারে পরিবর্তিতও হতে পারে! আর ডিটারজেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে এমন ফেসওয়াশ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন। 


নতুবা এই ধরণের ফেসওয়াশ ব্যবহারের কারণে এলার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। 


২. পানির ক্ষেত্রে সঠিক তাপমাত্রা ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত গরম পানি কিন্তু ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। মোট কথা অতিরিক্ত ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করলে তা সরাসরি আপনার ত্বকে হাইড্রেশন নষ্ট করে দেবে। 


অতিরিক্ত গরম পানির তাপ সহ্য করতে না পেরে ত্বকের উজ্জ্বলতা পুড়ে যাওয়ারও সম্ভাবনাও থাকে। তাছাড়া যেকোনো সাবান পানির সাথে গরম পানির মিশ্রণ কোনো ধরণের ত্বকের জন্যেই ভালো নয়। 


৩. নিজের ত্বককে ভালো রাখতে এবং হুটহাট ব্রণের সাথে সাক্ষাৎ করতে না চাইলে একই ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। যে ফেসওয়াশ আপনার ত্বকের সাথে ভালোভাবে স্যুট করছে সেই ফেসওয়াশই ব্যবহার করুন। 


ত্বকের যত্ন নিশ্চিত করতে মুখ ধোয়ার পরপরই রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন। ফেসওয়াশ ব্যবহার করার সাথে সাথে কমপক্ষে শীতকালে দিনে দুবার এবং গরমকালে দিনে তিনবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না কিন্তু। 


৪. অনেক ফেসওয়াশ ব্যবহার করার মুখে পানির ছিটা দিয়ে ইচ্ছেমতো মুখ ঘষতে থাকেন। যার কারণে মুখে অনেক ড্যামেজের সৃষ্টি হয়। সুতরাং মুখে জোরে ঘষাঘষি করা যাবে না। 


মুখ পরিষ্কার করার হালকা তোয়ালে দিয়ে মুখ আলতো করে মুছে নিন৷ ফেসওয়াশ ব্যবহার করার মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যেই যাদের মুখে ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা তেলমুক্ত ময়েশ্চারাইজার এবং যাদের স্কিন অনেক বেশি ড্রাই তারা ক্রিমযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।


৫. মেকআপ পরিষ্কার করার জন্য বা সরানোর জন্য কখনোই ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যাবে না। আজকাল বাজারে অনেক মেকআপ রিমুভার পাওয়া যায়। 


এসব রিমুভার দিয়েই মেকআপ পরিষ্কার করুন। তা সম্ভব না হলে সাধারণ ময়েশ্চারাইজারের সাহায্য নিতে পারেন। 


মেকআপ পুরোপুরি রিমুভ করে ফেলার পর ফেসওয়াশের সাহায্যে মুখ ধুঁয়ে নিন। আর হ্যাঁ! নিয়মিত ক্লিনজার, টোনার, ময়েশ্চারাইজার এই সার্কেলেই থাকার চেষ্টা করুন। 


শীতের জন্য কোন ফেসওয়াস কোন স্কিনের জন্য ভালো? 


শীতের জন্য কোন ফেসওয়াশ ভালো কেবল সে-সম্পর্কে জেনেই তা ব্যবহার করা যাবে না। আপনার স্কিনের জন্যে তা পার্ফেক্ট কিনা সেটিও চেক করতে হবে। 


কারণ একেকজনের একেকধরণের স্কিনের কারণে সকল ফেসওয়াশ কখনোই সকলে জন্য পার্ফেক্ট অপশন হয়ে উঠে না। বিস্তারিত জানতে নিচের তথ্যগুলি দেখুন। 


ফোমিং ফেসওয়াশ: যাদের ত্বক তৈলাক্ত, স্বাভাবিক, মিশ্র ও সংবেদনশীল ত্বকের যেকোনো একটি তারা এই ফোমিং ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারবেন। এই ধরণের ফেসওয়াশ ত্বকের হাইড্রেশন যেমন বজায় রাখে ঠিক তেমনই ত্বকে থাকা বাড়তি অয়েলও দূর করে।


জেলভিত্তিক ফেসওয়াশ: ত্বকের বাড়তি তেল দূর করতে এই ধরণের ফেসওয়াশ ভালোই কাজ করে। তবে সব ধরণের স্কিনেই এটি ব্যবহার করা যাবে। 


ক্রিমভিত্তিক ফেসওয়াশ: আপনার স্কিন কি অনেক বেশি ড্রাই? যদি ড্রাই হয় সেক্ষেত্রে এই ক্রিমভিত্তিক ফেসওয়াশ ব্যবহারে ভালো রেজাল্ট পেতে পারেন। 


ইতি কথা

অয়েলি স্কিন অনারদের চাইতে যাদের স্কিন অনেক বেশি ড্রাই এবং সেনসিটিভ তারা শীতের জন্য কোন ফেসওয়াশ ভালো তা নিয়ে ভালোভাবে রিসার্চ করে, ত্বকের সাথে ম্যাচ করে তবেই ফেসওয়াশ বাছাই করে নেবেন। আশা করি এই শীতে আপনার ত্বক থাকবে হাইড্রেটেড, সুস্থ, কোমল এবং উজ্জ্বল।

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন