বাংলাদেশের ১ নাম্বার ধনী কে: বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি | The richest person in Bangladesh

বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে

আপনি কি জানেন, বাংলাদেশের ১ নাম্বার ধনী কে বা বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটি কে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের নাম। 


তবে মজার ব্যাপার হলো যেহেতু তিনি বাংলাদেশে খুব একটা থাকেন না বা বসবাস করেন না সেহেতু বাংলাদেশী এই ধনকুবেরকে নিয়ে যেনো কৌতুহলের কোনো শেষ নয়। আপনিও যদি কৌতুহলী হোন সেক্ষেত্রে আজকের এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন। 


মুসা বিন শমসেরের পরিচয়

চলুন শুরুতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নয় বরং ব্যাক্তি হিসাবে মুসা বিন শমসেরের পরিচয় জেনে নিই। ১৫ অক্টোবর ১৯৪৫ সালে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন মুসা বিন শমসের। 


একসময় মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও সময়ের সাথে সাথে মুসা বিন শমসের হয়ে উঠেন বাংলাদেশ সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি এবং বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি এমন কলমসহ ছোট-বড় সকল দামী জিনিসপত্রে মালিক৷ 


ব্যাক্তি জীবনে তিনি ড. মুসা বিন শমসের নামেই বেশ পরিচিত। তার এই ডক্টরেট ডিগ্রিই প্রমাণ করে শিক্ষা-দীক্ষার দিক দিয়েও তিনি কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলেন না। 


তাছাড়া মজার ব্যাপার হলো শমসের কিন্তু একইসাথে বাংলা, ইংরেজি এবং উর্দুতে সাবলীলভাষায় টানা অনেকক্ষণ কথা বলার ক্ষমতা রাখেন। 


প্রিন্স অব বাংলাদেশ হিসাবে বেশ জনপ্রিয় এই ব্যাক্তি কিভাবে এতো অর্থের মালিক হলেন, মুসা বিন শমসের এখন কোথায় থাকেন সর্বোপরি মুসা বিন শমসের এর জীবন কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। 


মুসা বিন শমসের এর জীবন কাহিনী

ম্যান উইথ দি গোল্ডেন গানস শিরোনামে প্রথমবারের মতো স্থানীয় ব্রিটিশ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তার ৩ নাম্বার ছেলে এই মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে লেখালেখি করা হয়। সময়টা নব্বইয়ের দশক। 


একটি সংখ্যায় অর্থ্যাৎ ম্যাগাজিনে মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে লেখার কারণে হুট করেই তিনি সকলের নজরে আসেন। পেশায় মুসা বিন শমসের একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী। যার মাধ্যমেই তিনি এতো অর্থ সম্পদের মালিকে নিজেকে বেশ অল্প সময়ের মাঝেই পরিবর্তিত করতে পেরেছেন। 


নাম কিংবা পদবী যাই বলি না কেনো এই ধনকুবের মুসা বিন শমসের, প্রিন্স অব বাংলাদেশ, প্রিন্স মুসা হিসাবেই বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়! বাংলাদেশের পাশাপাশি তিনি পশ্চিমা জগতেও বেশ সুপরিচিত। 


বলা হয়ে থাকে বেশ তরুণ বয়সেই ব্যবসা শুরু করার কারণে আজ তিনি এতো টাকার মালিক হয়েছেন। তাছাড়া অস্ত্র ব্যবসায় কিন্তু অর্থের পরিমাণ অনেকটা বেশি। তার যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে সেটির নাম হলো ড্যাটকো। 


কেবল ব্যবসা কিংবা নিজের টাকা পয়সার পাশাপাশি বাংলাদেশে তিনি জনশক্তি রপ্তানিতেও বেশ সাড়া ফেলেছিলেন। আপনাদের নিশ্চয় যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার পার্টির টনি ব্লেয়ারের কথা মনে আছে! 


নির্বাচনের বছর তিনি টনিকে অর্থ দিয়েও সহায়তা করেছিলেন। সুতরাং বুঝতে পারছেন নিশ্চয় মুসার নিজস্ব অর্থের পরিমাণ ঠিক কতটা বড়!


ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি কানিজ ফাতেমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে সুখের সংসারে প্রবেশ করে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান। তারা প্রত্যেকেই বর্তমানে নিজ নিজ স্থান থেকে শিক্ষিত এবং হাজার জনের ১ জন হয়ে উঠেছেন। 


মুসা বিন শমসেরের বাড়ি কোথায়?

মুসা বিন শমসের মূলত ফরিদপুরের ছেলে। তবে অবাক করা বিষয় হলো ফরিদপুরে পৈতৃক ভিটা ছাড়া তার আরকিছুই নেই। বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হলেও কেনো তার গ্রামের বাড়িতে পৈতৃক ভিটা ছাড়া অন্য কোনো সম্পত্তি নেই তা নিয়েই সকলে বেশ কৌতুহলী হয়ে থাকেন। 


সুতরাং যদি আসল বাড়ি সম্পর্কে জানতে চান সেক্ষেত্রে বলবো মুসা বিন শমসেরের মূল বাড়ির ঠিকানা হলো ঢাকার ফরিদপুরে। 


মুসা বিন শমসের এখন কোথায়?

বর্তমানে গুলশান এলাকার সুরম্য প্রাসাদে মুসা বসবাস করছেন৷ ঘরের লিভিংরুমসহ প্রাসাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ছাদে দামি এবং জমকালো ঝালর ব্যবহার করা হয়েছে। 


তাছাড়া ঘরের ভেতরকার যে ডিজাইন সেই ডিজাইন আদৌ বাংলাদেশের অন্য কোনো ব্যাক্তি ঘরে শোভা পায় কিনা তা আমাদের জানা নেয়। এছাড়াও তিনি ঘরের মেঝেকে সাজিয়ে তুলেছেন মহামূল্যবান ঝকমকে কার্পেটে। 


তার ঘরে থাকা এককোণের সুপরিসর ডাইনিংস্পেস যেকোনো শান্তিপ্রিয় ব্যাক্তিকে মুগ্ধ করবে। যদিও দেশের একমাত্র ফাইভ স্টার ফ্যামিলির বাসাও ফাইভ স্টার বাসা হওয়া উচিত! 


মুসা বিন শমসের অস্ত্র ব্যবসা

মুসা বিন শমসের বিদেশে অস্ত্র ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ কামিয়েছেন বা অর্জন করেছেন। তবে সম্প্রতি দুদক যখন এই ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চায় তখনই মুসা তা জানাতে অস্বীকার করেন। 


তার মতে এই বিষয়গুলি শেয়ার করা হলে তা সরাসরি ব্যবসার ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে তিনি সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা ৫১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে যে অস্ত্রের ব্যবসার টাকাই বেশি সে কথা ইতিমধ্যেই ক্লিয়ার করেছেন। 


ড্যাটকো গ্রুপের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানি করলেও মুসার এই অস্ত্র ব্যবসা প্রায় সকলেরই কৌতুহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তিনি যেহেতু দুদকে এখনো এ-ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি সেহেতু একদিক দিয়ে এটি পুরোপুরি ন্যায় বহির্ভূত কাজ। 


আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি মুসা তেল বাণিজ্য ও কেনা-বেচা নিয়েও কাজ করে থাকেন। সবমিলিয়ে তার সকল ব্যবসায় সমান পদচারণা এবং ইনভেস্টমেন্ট তাকে বাংলাদেশের ১ নাম্বার ধনীতে বা বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিতে পরিণত করেছে। 


মুসা বিন শমসেরের গাড়ি

মুসা বিন শমসের মূলত কোটি টাকা মূল্যের রেঞ্জ রোভার মডেলের গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। তবে ট্যাক্সটসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যাবার কারণে গাড়িটি নিয়ে তৈরি হয়েছে মামলা। 


সহজ কথায় বললে বর্তমানে এই কোটি টাকার গাড়িটিকে জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর (সিআইআইডি)। জানা যায় জব্দ করার আগ পর্যন্ত গাড়িটি মুসার গুলশানের দামি বাড়িটিতেই ছিলো। ২০১১ সালের দিকে মুসা এই গাড়িটি কিনেছিলেন বাইরের দেশ থেকে। 


এই সময় মুসা চালাকি করে পাবনার ফারুকুজ্জামান নামে এক ব্যক্তির নামে গাড়িটিকে নিবন্ধন করেন। তবে পরবর্তীতে কাস্টম হাউসের নথি যাচাই করার পর জানায় পুরো বিষয়টি ভুয়া। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মুসার এই কোটি টাকা দামের গাড়ি বর্তমানে জব্দ অবস্থায় কতৃপক্ষের কাছে গচ্ছিত রয়েছে। 


মুসা বিন শমসেরের কলমের দাম

বাংলাদেশে মুসা বিন শমসেরের পাশাপাশি তার কলমও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই বিশেষ কলমটি সুইস ব্যাঙ্কের ভল্টে খুব যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। মুসা বিন শমসের এই কলমটিকে বিভাব ব্যবসার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। 


তার ধারণা এই কলমের সাহায্যে তিনি যে ব্যবসার জন্য সাইন করেন সেই ব্যবসাই সফলতা লাভ করে। আরো মজার বিষয় হলো যদি শমসেরের কখনো কোনো এক কোটি ডলার মূল্যের বেশি লেনদেনে বা ব্যবসায় সাইন করার প্রয়োজন পড়ে কেবলমাত্র সেই ব্যবসা বা লেনদেনের ক্ষেত্রেই তিনি কলমটি ব্যবহার করে থাকেন। 


যার কারণে কলমটিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সংগ্রহ করেন শমসের৷ বলা হয়ে থাকে কলমটি যে কোম্পানি তৈরি করেছে সেই কোম্পানি এই ধরণের কলম কেবলমাত্র এই এক পিসই তৈরি করেছে। যা কিনে নিয়েছিলেন শমসের। 


শুধু বাংলাদেশই নয়! বরং সারা বিশ্বে এই কলমটি ১ কোটি ডলার দামের একটি মন্ট বাঙ্ক কলম হিসাবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো বটে। কলমটি তৈরিতে কাজ করেছে ফ্রান্সের একটি বিশেষ কলম নির্মাতা কোম্পানি। 


যা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ এবং ৭৫০০ পিস অমূল্য হীরার খন্ড। তবে সম্প্রতি কলমটি তিনি ব্যাংক থেকে কোনোভাবেই তুলতে পারছিলেন না। এমনকি সুইস ব্যাংকে জমা রাখা তার অর্থকড়িও তিনি কোনোভাবেই তুলতে পারছিলেন না বলে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। 


ধারণা করা হচ্ছে ব্যাংকে জমা রাখা তার সকল সম্পত্তিই ইতিমধ্যেই জব্দ করা হয়েছে। লেনদেন অনিয়মিত বলেই যে ব্যাংক কতৃপক্ষ তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে তা ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে। 


ইতি কথা

বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি হিসাবে মুসা বিন শমসেরের জীবনের একাংশ এখনো অজানা। সারা বাংলাদেশ তার জমকালো বাড়ি, গাড়ি, কলম, রোলেক্স ঘড়ি দেখতে পেলেও তার ব্যবসার ধরণ, এতো অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ার উপায় সম্পর্কে কেউই খুব একটা জানে না। 


তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে তিনি বুদ্ধিদীপ্ত ও মেধাবী সন্তানের গর্বিত পিতা হিসাবে চমৎকার ব্যাক্তি। পরিবারের প্রতি রয়েছে তা অগাধ ভালোবাসা এবং আবেগ। 


আশা করি খুব অল্প সময়ের মাঝে আমরা এই তরুণ বয়সেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনকারী, বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি এবং গর্বিত পিতা সম্পর্কে নানান অজানা তথ্য জানতে সক্ষম হবো।

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন