এলন মাস্ক কত টাকার মালিক: এলন মাস্কের নেট মূল্য কত

How much does Elon mask own: What is the net price of Elon mask

অনেক বেশি পরিমাণে ইনভেস্টমেন্ট এবং সেলসের কারণে ইলন মাস্ক নিয়মিত অনেক বেশি প্রোফিট তৈরি করে থাকে। অনেকেই জানতে চান ইলন মাস্ক এর মাসিক আয় কত! মূলত ইলন মাস্ক এর মাসিক আয় ১,৩২০ মিলিয়ন ডলার। 


আপনি জেনে অবাক হবেন নিয়মিত হারে তার এই ইনকামের পরিমাণ অনেক বেশি হারে বাড়ছে। চলুন কথা আর না বাড়িয়ে মাস্কের ব্যাপারে আরো বেশকিছু অবাক করা তথ্য নিয়ে আলোচনা করি। 


ইলন মাস্ক এর দৈনিক আয় কত?

ইলন মাস্ক এর দৈনিক আয় হলো ৪৪.৩৮ মিলিয়ন ডলার। ইলন মাস্ক একটি গড় ট্রেডিংয়ে ক্ষেত্রে দিনে প্রায় এই পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে থাকে। আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১ লক্ষ ৪০ হাজার ব্যাক্তির নেট মূল্য ৫০ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি। 


ঠিক এমন পরিস্থিতি এই ইলন সাহেব নিয়মিত আয় করছেন ৪৪.৩৮ মিলিয়ন ডলার পরিমাণ অর্থ। আরো শকিং বিষয় হলো বার্ষিক হারে আপনি যদি এই অর্থের পরিমাণটিকে হিসাব করেন সেক্ষেত্রে দেখবেন তার আয় করে অর্থের মাধ্যমে বছরে আরো ৩৩৬ জনের মতো ব্যাক্তি ৫০ মিলিয়ন ডলারের মালিক হতে পারতো বা যেকোনোভাবেই মিলিয়নিয়ারের খাতায় নিজের নাম লেখাতে পারতো। 


ইলন মাস্ক এর প্রতি সেকেন্ডের আয় কত?

ইলন মাস্ক প্রতি সেকেন্ডে কতটা করে তা জানলে সম্ভবত আপনার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে যাবে। ইলন মাস্ক প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫১৩/৫১৪ ডলারের মতো অর্থ আয় করে থাকেন। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সপ্তাহের বেশকিছু ব্যাক্তি সাধারণের উপার্জনের চেয়েও অনেক বেশি হয়ে যায়। 


ইলন মাস্কের নেট মূল্য কত?

ফোর্বস ২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী ইলন মাস্কের নেট মূল্য ২৪৮ বিলিয়ন ডলার বা তারও বেশি। আর এই পরিমাণ অর্থ সম্পদের কারণেই তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকার একেবারে শুরুতে স্থান পেয়েছেন। 


রিসোর্স অনুসারে মাস্কের নেট মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কেবল তার বিজনেস গ্রোথিংয়ের কারণে। মাস্ক তার ব্যবসায়িক কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৯৫ সাল থেকে। শুরুতে তিনি অনলাইন সংবাদপত্রে মানচিত্র এবং ব্যবসার ডিরেক্টরি প্রদান করে এমন কার্যক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান Zip2 কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। 


Zip2 এর পর মাস্কের মিশন হয়ে দাঁড়ায় X.com প্রতিষ্ঠা করা এবং আজকের পেপ্যাল হিসাবে প্রতিষ্ঠানটিকে জনপ্রিয় পেমেন্ট সার্ভিস কোম্পানি হিসাবে গড়ে তোলা। সফলতার মুখ দেখার পর মাস্ক যেনো আরো বেশি স্বপ্নবাজ হয়ে উঠেন। 


পেপ্যাল প্রতিষ্ঠার পর মাস্ক স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। মিশন ছিলো সবাই কম খরচে মহাকাশ ভ্রমণ করতে পারবে। সময়ের সাথে সাথে তিনি টেসলার সিইও পদটিকেও নিজের করে নেন। 


এরপর বিজনেস কাকে বলে তা শেখাতে তিনি পেপ্যাল ইবে-এর কাছে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন৷ সবমিলিয়ে মাস্কের এই বিলিয়নিয়ার হওয়ার পেছনে রয়েছে তার ব্যবসায়িক তবে ইউনিক আইডি, ট্রিকস এবং লেগে থাকার মন-মানসিকতা। 


ইলন মাস্ক কিভাবে এতো টাকার মালিক হলেন? 

ইলন মাস্ক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন নামি-দামি পত্রিকার শিরোনাম হয়ে উঠেছেন। তার এই বিশাল পরিমাণ অর্থের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন বিজনেস ট্রিকস এবং নামকরা কিছু কোম্পানির হাত। 


এক কথায় ইলন মাস্ক বিভিন্ন ফরোয়ার্ড-থিঙ্কিং প্রযুক্তি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে বা এতে বিনিয়োগ করে তার এই বিলিয়ন পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছেন৷ এর মধ্যে রয়েছে তার ইলেক্ট্রিক গাড়ির কোম্পানি টেসলা, মহাকাশ পরিবহন এবং স্যাটেলাইট কোম্পানি স্পেসএক্স এবং রিসেন্ট কেনা নতুন কোম্পানি ও সোশ্যাল মিডিয়া সাইট টুইটার। 


বলে রাখা ভালো ইলন মাস্ক বর্তমানে ছয়টি কোম্পানির মালিক। চলুন এসম্পর্কে বিস্তারিত জানি। 


টেসলা

ইলন মাস্কের প্রথম দিককার জনপ্রিয় একটি কোম্পানি হলো টেসলা। টেসলা মূলত বৈদ্যুতিক যানবাহন, সৌর শক্তি উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। পাশাপাশি এটি বিভিন্ন ধরণের ব্যাটারির শক্তি সঞ্চয় করে এমন প্রোডাক্টের ডিজাইনিং ও উৎপাদনের কাজ করে থাকে। 


টেসলা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। আর বর্তমানে কোম্পানিটির সিইও হলেন ইলন মাস্ক। এখনো পর্যন্ত এখানে মাস্কের ৬.৫ মিলিয়ন ডলারের মতো ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে। 


বোরিং কোম্পানি

অবকাঠামো এবং ভূগর্ভস্থ টানেল নির্মাণকে বিজনেস হিসাবে নেওয়া এই বোরিং কোম্পানির সাথেও জড়িয়ে আছে ইলন মাস্কে নাম। ২০১৬ সালের দিকে মাস্ক এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করে। 


যা প্রতিষ্ঠা করতে তিনি সর্বপ্রথম খরচ করেন ১১৩ মিলিয়ন ডলার। আর এর মাঝে ১০২ মিলিয়ন ডলারই ছিলো মাস্কের নিজের। ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটির নেট মূল্য ৫.৭ বিলিয়ন ডলারেও বেশি। 


এক্স বা টুইটার

সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি হিসাবে টুইটারকে আমরা কমবেশি সকলেই চিনি। মাস্ক হলেন এই টুইটার বা এক্সের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং সিটিও। অনেকেই মাস্ককে টুইটারের সিইও ভেবে ভুল করে থাকেন। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। 


মূলত ২০২৩ সালে টুইটারের সিইও পদ থেকে মাস্ক পদত্যাগ করেছেন। মূলত ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মাস্ক টুইটার কোম্পানিকে কিনে নিলেও ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত এর নেট অর্থ বা দামের পরিমাণ ছিলো ১৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। 


ইলন মাস্ক-এর শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?

ইলন মাস্ক এর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে জানিয়ে রাখি, এই ব্যাক্তি কিন্তু টেকনোলজি এবং বিজনেস রিলেটেড বিষয়ের যথেষ্ট মেধার পরিচয় দিয়েছেন। 


ইলন মাস্কের বয়স যখন ১০ বছর তখন তার বাবা তাকে একটি কমোডোর ভিআইসি-২০ মাইক্রোকম্পিউটার কিনে দেন। আর এই কম্পিউটার হাতে পেয়ে মাস্ক কীভাবে এটি প্রোগ্রাম করতে হয় তা নিজে নিজেই শিখে ফেলেন। 


অথচ সেই সময় এই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং স্কিল প্রত্যেকের জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি স্কিল ছিলো। তবে মাস্ক এই স্কিলটিকে কেবল শেখার বিষয় হিসাবে না নিয়ে নেশা এবং ভালো লাগার অংশ হিসাবে নিয়েছেন। ছোটবেলায় অনেক অনেক বই পড়তে ভালোবাসতেন ইলন মাস্ক। 


ইলন মাস্ক পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৯৪ সালে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। 


বলে রাখা ভালো পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুল থেকে স্নাতক শেষ করার পরে তিনি কিন্তু জিপ টু নামে একটি ইন্টারনেট স্টার্টআপের জন্য কাজ করেছিলেন। যার পরপরই পেপালের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন এই বিলিয়নিয়ার। 


এরপরে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। যেখানে তিনি ১৯৯৮ সালে তার মাস্টার্স অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রি এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। সুতরাং বলাই যাক ইলন মাস্ক একজন পিএইচডিধারী শিক্ষিত যোগ্য ধনী ব্যাক্তি। 


ইলন মাস্কের পরিবার সম্পর্কিত তথ্য

পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি কিংবা টুইটার কোম্পানির সাথে ভালোভাবে নিজের নাম জড়িয়ে যাওয়া…যে কারণেই হোক না কেনো, অনেকেই মাস্কের পরিবার সম্পর্কিত তথ্য জানতে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন৷ চলুন এই আগ্রহের জের ধরেই আলোচনা করি মাস্কের পরিবার সম্পর্কিত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। 


ইলন মাস্কের বাবা মায়ের পরিচয় 

দক্ষিণ আফ্রিকার ইঞ্জিনিয়ার এরোল মাস্ক এবং বিখ্যাত মডেল মায়ে মাস্কের ছেলে ইলন মাস্ক। পারিবারিক দিক দিয়ে সন্তান হিসাবে অতটা সুখী ছিলেন না মাস্ক। সময়ের সাথে সাথে একসময় এরোল মাস্কের ৩৪ বছর বয়সী সৎ কন্যা জনা বেজুইডেনহাউট সম্পর্কে জানতে পারে মাস্ক ও তার পরিবার। 


সেই যায় হোক! সাম্প্রতিককালের বেশকিছু ইন্টারভিউ ঘাটাঘাটি করে জানা যায় মাস্ক তার বাবাকে খুব একটা পছন্দ করেন না। এক ইন্টারভিউতে তো তিনি বলেই বসলেন তার বাবার মতো ভয়ংকর মানুষ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। 


এদিকে মাস্কের আত্মবিশ্বাসকে চাঙ্গা রাখতে, তাকে সফলতা অর্জন করতে সর্বোচ্চ সাহায্য করে গেছেন তার ৭৪ বছর বয়সী মা বিখ্যাত মডেল মায়ে মাস্ক। যদিও ব্যাক্তিগত জীবনে মায়ে মাস্ক নিজের পরিচয়েই বেশ পরিচিত ছিলো। 


জানা যায় তিনি ৬৯ বছর বয়সে কভারগার্লের সবচেয়ে বয়স্ক মুখপাত্র হয়ে ওঠেন। শুধু তাই নয়, বরং ৭৪ বছর বয়সে এসেও তিনি সম্প্রতি স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড সুইমস্যুট কভারে সবচেয়ে বয়স্ক তবে জনপ্রিয় নারী হিসাবে কভারে থাকার সুযোগ পান৷ ১৯৭৯ সালের দিকে মাস্কের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। 


ইলন মাস্কের ভাই বোনের পরিচয়

বাবার সাথে মাস্কের খুব একটা ভালো সম্পর্ক না থাকলেও, মাস্ক তার ভাইবোনদের সাথে সবসময় ঘনিষ্ঠ থাকার চেষ্টা করেছেন। মাস্কের আরো ২ জন ছোট ভাইবোন রয়েছে। 


ইনারা হলেন কিম্বল মাস্ক যার বয়স ৪৯ এবং টোসকা মাস্ক যার বয়স বর্তমানে ৪৭। কিম্বল মাস্ক বর্তমানে দ্য কিচেন রেস্তোরাঁ গ্রুপ, বিগ গ্রিন এবং স্কয়ার রুটসের মালিক এবং টোসকা মাস্ক বর্তমানে একজন পরিচালক ও প্রযোজক হিসাবে কাজ করছেন।


ইলন মাস্কের স্ত্রী এবং সন্তান

মাস্ক কানাডিয়ান লেখক জাস্টিন উইলসনকে ২০০০ সালে ভালোবেসে বিয়ে করলেও ২০০৮ এর দিকে তাদের ডিভোর্স হয়। 


তবে এই ঘরে নেভাদা আলেকজান্ডার মাস্ক নামে মাস্কের একজা ছেলে সন্তান হয়। ভাগ্যক্রমে ১০ সপ্তাহের মধ্যেই আলেকজান্ডার মৃত্যুবরণ করেন। 


২০১০ সালে এসে মাস্ক বিয়ে করেন অভিনেত্রী তালুলাহ রিলেকে। ২ বছর পর এই বিয়েও ভেঙে যায়। মজার ব্যাপার হলো ডিভোর্সের ২ বছর পর তিনি রিলেকে আবারও বিয়ে করে ২০১৪ সালে ডিভোর্স দিয়ে দেন। 


কানাডিয়ান সঙ্গীতশিল্পী গ্রিমসের সাথে তিনি আবার ২০১৮ সালে ডেট করেন। বেশ কয়েক বছর আগে তাদের ব্রেকআপ হলেও বর্তমানে তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আছেন৷ 


ইতি কথা

আশা করি এলন মাস্ক কত টাকার মালিক এবং এলন মাস্কের নেট মূল্য কত সে-সম্পর্কিত তথ্যসহ মাস্কের যাবতীয় সকল তথ্য এক আর্টিকেলে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। মজার বিষয় হলো ধনীর অর্থসম্পদে কমতি না থাকলেও ব্যাক্তিজীবনের টানাপোড়েন যেনো তাদের পিছুই ছাড়ে না। আমরা আশা করবো ভবিষ্যতে মাস্ক তার ব্যাক্তিজীবনের সুশৃঙ্খল ধারা ফিরে পাবে।

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন