শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত? What should be smeared on the face in winter?

What should be smeared on the face in winter?

শীতকাল এলেই আমাদের ত্বক হয়ে উঠে রুক্ষ-শুষ্ক এবং নেতানো। এমতাবস্থায় বুঝতে পারি না কিভাবে স্কিন কেয়ার করা উচিত এবং শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত। 


এক্ষেত্রে জানতে হবে শীতের স্কিন কেয়ার টিপস, বিভিন্ন নিয়ম এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তবে তার পূর্বে বলে নিই রুক্ষ, শীতের শুষ্ক ত্বককে জেরোসিসও বলা হয়। 


শীতকালে প্রতিনিয়ত বাহ্যিক পরিবেশের সাথে ইন্টারফেস করতে করতে সাধারণত ব্যাক্তির এই স্কিন জেরোসিসও রোগ বা সমস্যা ধরা পড়ে। সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারলে আবার এই সমস্যা থেকে মুক্তিও পাওয়া যায়। 


শীতে মেয়েদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায় 

শীতকালে আমাদের ত্বক বেশ দূর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে আমাদের ফেইসে ধরা পড়ে সংবেদনশীলতা এবং দীপ্তিহীনতা। চলুন জেনে নিই শীতে মেয়েদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার মাথানষ্ট কিছু উপায়। 


ময়শ্চারাইজিং ক্লিনজার ব্যবহার করুন

ময়শ্চারাইজিং ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বককে সবসময় পরিষ্কার রাখারটা জরুরি। নতুবা ব্রণসহ ত্বকে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 


আর ময়শ্চারাইজিং ক্লিনজার হিসাবে কোন কোন ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ ভালো হবে তা ইতিমধ্যেই আমরা পূর্বের একটি আর্টিকেরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর তা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে-সম্পর্কেও নিশ্চয় জেনেছেন। 


আমাদের ত্বক যেহেতু শুষ্ক বাতাসে তার আর্দ্রতা হারায় সেহেতু ত্বককে হাইড্রেট করতে সাহায্য করতে পারে এমন একটি ক্লিনজার বেছে নেওয়াটা জরুরি। যা ত্বকের টানটান বা শুষ্কভাব দূর করে ত্বকে আনবে মসৃণতা। 


নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখুন

এমন যেনো না হয় আপনার ত্বকে অনেক সময় ধরে অপরিষ্কারভাবে পড়ে আছে। ত্বকে থাকা ময়লা সবসময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। সকালে এবং রাতে দিনে ২ বার করে ত্বক পরিষ্কার রাখতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। 


মনে রাখবেন ত্বকের প্রাকৃতিক কোষের টার্নওভার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ত্বকের ভেতর সময়ে সময়ে ময়লা-আবর্জনা জমে। তা নিয়মিত পরিষ্কার করাটা বেশ জরুরি। 


তাছাড়া এভাবে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখলে তা ত্বকের রক্ত ​​প্রবাহ বাড়ায় এবং টক্সিন নির্মূল করতে সহায়তা করে। 


হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ব্যবহার করুন

অ্যাসিড ব্যবহারের কথা শুনে ভয় পাবেন না। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড হলো মূলত সুস্থ ত্বকের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। বিভিন্ন ফেসওয়াশ এবং ময়েশ্চারাইজিং ক্রিমে এই উপাদানটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 


তাছাড়া নিয়মিত হাইড্রেটেড থাকলে অর্থ্যাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে এবং পানির সাহায্য মুখ পরিষ্কার করলে তা এই হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের অভাব কিছুটা হলেও দূর করে।


দিনের বেলায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন 

শীতকালে সুস্থ ত্বক পেতে স্কিন কেয়ার রুটিনের ঢাল হিসেবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। দিনের বেলাতে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে রক্ষা করবে। 


আপনি যখন বাইরে যাওয়ার প্ল্যান করবেন ঠিক তার ৩০ মিনিট আগেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করে নেবেন। কারণ বের হওয়ার সাথে সাথে এটি ব্যবহার করলে সানস্ক্রিনের ত্বকে সঠিকভাবে কাজ করার সুযোগ থাকে না। 


আর বর্তমানে শীতের আবহাওয়াতে এসপিএফ ১৫-৩০ এর সানস্ক্রিন ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর যদি অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই! 


বাইরে মাস্ক ব্যবহার করুন 

শীতকালে চারিদিকে যে বাতাসটি লক্ষ্য করা যায় সেই বাতাসটি ত্বককে আরো নাজুক করে তোলে। এমনটা না চাইলে বাইরে বের হতেই মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিতে হবে। 


শুধু শীতকালীন শুষ্ক বাতাসই বা কেনো! এই মাস্ক আপনাকে বাইরে উড়ন্ত ধুলোবালি থেকে ত্বককে রক্ষা করতেও সাহায করবে। 


সাবান ব্যবহারে সতর্ক হোন

বারবার সাবান ব্যবহার করলে তা ত্বকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ত্বকে আরো শুষ্ক করে তোলে। সুতরাং গোসল করার সময় বারবার সাবান ব্যবহার না করে পর্যাপ্ত পরিমাণে কেবল একবারই ব্যবহার করুন। 


আর সাবান কেনার সময় অতিরিক্ত ফেনা এবং ফোমি হয়, সেই সাথে সুগন্ধের পরিমাণটা মোটামুটি কম এমন সাবান বেছে নিন। এতে করে ত্বক ভালো থাকবে। 


হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, সিরামাইড, তেল রয়েছে এমন সাবান বাছাই করে ড্রাই স্কিনের জন্য শীতকালে ব্যবহার করতে পারেন৷ 


ঘন ঘন হাত ময়শ্চারাইজ করুন

শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত সে-সম্পর্কে জানার পাশাপাশি জানতে হবে হাতের ময়েশ্চারাইজিং করার গুরুত্ব সম্পর্কে। কারণ হাত এবং মুখের স্কিনের যদি বিশাল ফারাগ লক্ষ্য করা যায় তা খুব একটা ভাল দেখাবে না। 


সাধারণ সর্দি, ফ্লু এবং বিভাব ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পূর্বে হাত ভালোমতো পরিষ্কার করে নেবেন। 


এছাড়াও থালা-বাসন ধোয়ার সময় বা বাড়ির চারপাশে পরিষ্কার করার সময় হাতে গ্লাভস ব্যবহার করাটা জরুরি। নতুবা যাদের ঘন ঘন মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস রয়েছে অপরিষ্কার হাতের কারণে তারা ত্বকের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। 


খাবার গ্রহণ করুন সঠিক উপায়ে

মুখের ত্বককে ভেতর থেকে ভালোভাবে ময়শ্চারাইজ করতে হলে আপনাকে প্রচুর হাইড্রেটেড থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন। বেশি বেশি ফলের রস পান করুন। 


প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার ডাইনিংয়ে রাখুন। শর্করা জাতীয় খাবার-দাবারের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনলে ত্বক আরো ভালো থাকবে। 


সকালে ত্বকের যত্ন নিন

শীতের সকালে চারিদিকের পরিবেশের কারণে ত্বকে ড্যামেজ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সমাধান হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন ফেসওয়াশ বা কোমল ময়েশ্চারযুক্ত সাবান। আর হ্যাঁ! 


ফেসওয়াশ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই তা আপনার ত্বকের সাথে ম্যাচ করে কিনা বা যায় কিনা তা জেনে নেবেন। তাছাড়া সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিমাণের দিকটা লক্ষ্য রাখা জরুরি। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে সাবান ব্যবহার করলে তা ত্বকে নেগেটিভ এফেক্ট ফেলে। 


শীতের সকালের স্কিন কেয়ারের বিষয়ে আরো একটি টিপস শেয়ার করা উচিত। এই সময়টাতে গাজরের রস ভালোই কাজে দেয়। সুতরাং গাজরের রস মেখে ২/৩ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ পানিতে ধুয়ে ফেললে ত্বক ভালো থাকবে। 


শীতকালে ত্বকের যত্নে করা ভুল 

শীতকালে এই সাধারণ স্কিনকেয়ার ভুলগুলি এড়াতে পারলে দেখবেন আপনার ত্বক শীতকালেও কেমন গ্লো করছে। পাশাপাশি এসব ভুল দৈনন্দিন স্কিনকেয়ার রুটিনে মেনে চলাটাও সত্যিই অনেক সহজ! যেমন: 


ভুল ক্লিনজার ব্যবহার করা

আপনি যদি ভুল ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করেন সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে ব্রণসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া ক্লিনজিং হলো যেকোনো স্কিন কেয়ার রুটিনের প্রথম ধাপ। 


আর প্রথম ধাপই যদি সঠিক না হয় সেক্ষেত্রে তা পুরো স্কিন কেয়ার রুটিনটাকেই নষ্ট করে দেবে। মনে রাখবেন জেল-ভিত্তিক ক্লিনজারগুলি গরমকালে ভালো কাজ করলেও শীতকালে ব্যবহারের জন্য তা মোটেও উপযুক্ত নয়। 


সুতরাং ঠান্ডা আবহাওয়ার ক্ষেত্রে, জেল এবং ফোম-ভিত্তিক ক্লিনজারগুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। নতুবা এসব ব্যবহারে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এর পরিবর্তে যদি ক্রিম ক্লিনজারগুলি বেছে নেন সেক্ষেত্রে তা আপনার ত্বককে কোমল করে তোলার পাশাপাশি উজ্জ্বলও করে তুলবে। 


ফেস মাস্ক ব্যবহার না করা

শীতকালে মুখের উপর ভালো এবং ঠান্ডা ফেস মাস্ক এপ্লাই করাটা আরেকটি মস্ত বড় স্কিন কেয়ার মিসটেক। তাছাড়া যেকোনো ভালো মানের ফেস মাস্ক ত্বকে প্রচুর অতিরিক্ত পুষ্টির পাশাপাশি তীব্র হাইড্রেশন প্রদান করে থাকে। তবে স্কিন অনুযায়ী মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। 


ঠোঁট এবং হাতের যত্ন না নেওয়া

শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত, কিভাবে যত্ন নেওয়া উচিত, কি কি বিষয় এড়িয়ে চলা উচিত…এসব বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন থাকলেও ঠোঁট এবং হাতের যত্নের ব্যাপারে আমরা বরাবরই অসচেতন থাকি। যা মোটেও উচিত নয়। 


কারণ আমাদের ঠোঁট এবং হাতের ত্বক সবসময় পাতলা এবং অনেক বেশি সূক্ষ্ম থাকে। তাছাড়া সূর্যের ক্ষতিকারক আলো ঠোঁটের স্কিন টোন পাতলা হওয়ায় ঠোঁটের আরো ক্ষতি করে বসে। 


এক্ষেত্রে শীতকালে ঠোঁটের যত্নে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। কারণ এই পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বককে আরও শুষ্ক করে দিতে পারে। পাশাপাশি সম্ভব হলে ভালো হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। 


সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা

সূর্যের UVA এবং UVB উভয় রশ্মিই আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। অকাল বার্ধক্যের মতো ত্বকের ক্ষতি করতে যার খুব একটা সময়ই লাগেনি। 


সুতরাং শীতকালে সূর্যের এমন ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে ১৫ এসপিএফ সহ ভালো মানের, ত্বকের স্যুট করে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না।


ইতি কথা

শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত সে-সম্পর্কে তো বিস্তারিত জানলেন! পাশাপাশি জানলেন শীতকালে করা মারাত্মক কিছু স্কিন কেয়ার মিস্টেক। জানাজানির পর এবার তা সঠিকভাবে মেনে চলার পালা। আসুন শীতকালে ভালো থাকি এবং নিজের ত্বকের সঠিক যত্ন নিই। 

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন