পিম্পল বা ব্রণ! যে নামেই ডাকি না কেনো সমস্যাটিকে বর্তমান সময়ের মারাত্মক স্কিন প্রবলেম বললে ভুল হবে না।
তবে বেশকিছু টেকনিক এবং তথ্য জানা থাকলে ব্রণ হওয়ার কারণসহ ব্রণ দূর করার মতো বিশ্ব জয়ের কাজটিও সেরে ফেলা যাবে। কিভাবে? জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
ব্রণ হওয়ার কারণ কি?
শুরুতেই আমরা জানবো ব্রণ হওয়ার কারণ কি বা কি কি কারণে আমাদের ফ্রেইসে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এসব কারণ জানা থাকলে ব্রণ দেখা দেওয়ার কারণ বা ফ্যাক্টরকে যেমন পিন করা যায় ঠিক তেমনই এটি ঠিক করার জন্য সচেতনতার অংশ হিসাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা সহজ হয়ে আসে। যাইহোক! ব্রণ হওয়ার কারণগুলি হলো:
ফেস মাস্কের ব্যবহার
নিয়মিত অনেক সময় ধরে যদি ফেস মাস্ক ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে মাস্কের ভেতর অতিরিক্ত ঘাম, তেল এবং ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। পরবর্তীতে তা খুব অল্প সময়ের মাঝেই ব্রণের সৃষ্টি করতে পারে।
তাছাড়া অনেক বেশি গরম পড়লে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেই পরিবেশ ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলির জন্য সেরা সময় হিসাবে বিবেচিত হয়। তার উপর যদি মাস্কের ভেতর জমা ঘাম এবং তেলের সন্ধান পায় তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই!
সুতরাং মাস্ক ব্যবহারের সময় ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা রাখুন। নিয়মিত মাস্ক গরম পানিতে ধুঁয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। সম্ভব হলে সার্জিকাল ওয়ান টাইম মাস্কগুলি ব্যবহার করুন।
ব্রণে ঘষাঘষি করা
অনেকেই মনে করেন ব্রণ ঘষাঘষি করতে করতে উঠিয়ে ফেললে বোধহয় এই সমস্যা কমে যাবে! কিংবা ফেইসে ব্রণের স্পট দ্রুত দূর হয়ে যাবে। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। কারণ ব্রণে পপআপ করলে বা অতিরিক্ত ব্রণে হাত দিলে চারপাশে আরো ব্রণের সৃষ্টি হয়।
তাছাড়া ব্রণের স্পটগুলিকে বা গোটাগুলিকে যদি বেশি পুশ করা হয় সেক্ষেত্রে অসতর্কতাবশত ব্যাকটেরিয়াগুলি ত্বকের গভীরে চলে যেতে পারে।
এছাড়াও এই ধরণের অভ্যাসের কারণে আপনার ত্বক ফেটে যাওয়ার সাথে সাথে আপনার মুখ এবং হাতের অন্যান্য অংশ থেকে বাড়তি ব্যাকটেরিয়া ত্বকে প্রবেশ করতে পারে।
নোংরা বালিশের ব্যবহার
কখনও কখনও ব্রণ ব্রেকআউটের সমাধান হিসাবে নোংরা বালিশকেও বিদায় জানাতে হয়। সকালে এবং রাতে হালকা ক্লিনজার দিয়ে আপনার মুখ পরিষ্কার করার পর যদি আপনি আবারও নোংরা বালিশে মুখ রাখেন সেক্ষেত্রে বালিশে থাকা ব্যাকটেরিয়া আপনার ত্বকের প্রবেশ করে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্রণের সৃষ্টি করতে পারে।
সুতরাং নিয়মিত বালিশ পরিষ্কার রাখুন। সপ্তাহে অন্তত ২ বার বালিশের কভার ধুঁয়ে শুকিয়ে নিন। আর হ্যাঁ! প্রতিদিন বা ১ দিন পরপর বালিশের কভার কড়া রোদে শুকোতে দিতে ভুলবেন না কিন্তু।
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি
জানিয়ে রাখা ভালো সূর্য অথবা ট্যানিং বিছানা থেকে ছড়িযে পড়া ক্ষতিকারক UV রশ্মির অতিরিক্ত এক্সপোজার আপনার ত্বকে ব্রণের সৃষ্টি করতে পারে।
ব্রণ হওয়ার কারণ হিসাবে সূর্যের এক্সপোজারের হাত থেকে যথাসম্ভব ত্বককে রক্ষা করতে হবে। মনে রাখবেন, সূর্যের এক্সপোজার ত্বককে অনেক বেশি পরিমাণে শুষ্ক করে দিতে পারে। যার ফলে ত্বকে তেলের অত্যধিক উৎপাদন নিশ্চিত হবে এবং অবশেষে ত্বকে ব্রণের ব্রেকআউট দেখা দেবে।
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে বাইরে থাকাকালীন সময়ে সানস্ক্রিনের ব্যবহার করা নিশ্চিত করুন। টুপির মতো সুরক্ষামূলক পোষাকগুলিকে ড্রেস আপের সময় বাড়তি নজর দিন।
অপর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিত হলে তা আমাদের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে৷ এদিকে কর্টিসল হলো ত্বকের অত্যধিক সক্রিয় তেল গ্রন্থিগুলির সাথে রিলেটেড একটি হরমোন।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন ঘুমের সাথে হরমোনের কি দারুণ সম্পর্ক রয়েছে! প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন। সুস্থ ঘুম পেতে ১১ টার আগেই শুয়ে পড়ুন।
তাছাড়া নয়েজ নেই, আরামদায়ক বিছানা রয়েছে সর্বোপরি ভালো ঘুমের ব্যবস্থা রয়েছে এমন রুমকে ঘুমানোর জন্য বেছে নিন।
অত্যাধিক ডিপ্রেশন এবং ঘাম
দেহে কর্টিসল হরমোনের ওঠা-নামার ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনও বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর। অতিরিক্ত টেনশন বা ডিপ্রেশন দু'টোই ত্বকের জন্যে ভালো নয়। যারা বাড়তি টেনশন করেন তারা সময় সমাধান খুঁজে বের করে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।
সেই সাথে ঘামের দিকটাও মাথায় রাখতে হবে। মুখে যেনো অনেক বেশি ঘাস জমে না থাকে সেই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজন জমে থাকা ঘাম ঘনঘন মুছে দিতে হবে।
আর যাদের অতিরিক্ত ঘামার সমস্যা রয়েছে তারা যথাসম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। মনে রাখবেন জমে থাকা ঘামে জীবাণু থাকে এবং সেখান থেকেই ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি ব্রণের জন্ম হয়।
ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়
ব্রণ হওয়ার কারণ কি সে-সম্পর্কে তো জানলেন! আশা করি উপরোক্ত কারণগুলি মাথায় রাখলে আপনার ত্বকের কোনোধরণের ব্রণের সমস্যা দেখা দেবে না।
তবে যদি অসচেতনা কিংবা অন্য কোনো কারণে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায় হিসাবে নিচের টিপসগুলি ফলো করতে পারেন:
১. অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন
অ্যালোভেরাকে মূলত প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বলা হয়। যার কারণে এসব বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে অ্যালোভেরা ব্রণের উপস্থিতি কমাতে পারে এবং সহজেই ব্রণ ব্রেকআউট প্রতিরোধ করতে পারে। তাছাড়া অ্যালোভেরাতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড এবং জিঙ্ক রয়েছে। ত্বকে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে হলে:
শুরুতে ব্রণের ঘা পরিষ্কার করে নিন
সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে ত্বক ধুঁয়ে নিন
দিনে দুইবার অ্যালোভেরার ক্রিম বা জেলের একটি পাতলা স্তর প্রয়োগ করুন
২. মধু ব্যবহার করুন
হাজার হাজার বছর ধরে, মধু ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করছে। বলে রাখা ভালো এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা আটকে থাকা ব্রণের ছিদ্রগুলি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
তবে অনেকেই মনে করেন মধুর নির্দিষ্ট অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাবের কারণে এটি হয়তো ত্বকের কোনো ক্ষতি করে বসবে। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। পর্যাপ্ত পরিমাণে গবেষণা করার পরও মধুর এমন বিরূপ বৈশিষ্ট্যের খবর এখনোও বেরিয়ে আসেনি।
দ্রুত ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পরিষ্কার আঙুল বা তুলার প্যাড ব্যবহার করে, ব্রণগুলিতে সামান্য মধু ঘষুন। যারা সরাসরি মধু ব্যবহার করতে চান না তারা মুখ বা বডি মাস্কে মধু যোগ করতে পারেন।
৩. সঠিক ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন
শুরুতেই বলেছি ত্বকে থাকা ময়লা, তেল কিংবা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার রাখতে না পারলে কোনোভাবেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে সঠিক ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ। আর যারা ভাবছেন ফেসওয়াশের পরিবর্তে সাবান ব্যবহার করলেই তো হয়! তাদের বলে রাখি অনেক নিয়মিত সাবানে কিন্তু অ্যাসিডিটি বা পিএইচ থাকে। যা খুব বেশি পরিমাণে ত্বকে জ্বালাপোড়া করে।
সেই সাথে ব্রণকে আরও খারাপ করে তোলে। সুতরাং যথাসম্ভব ব্রণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে এবং ব্রণের কারণে মৃষ্ট ঘা নিরাময় করতে হালকা ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার বেছে নিন এবং তা নিয়মিত ব্যবহার করুন।
৪. যথাসম্ভব হাইড্রেটেড থাকুন
ব্রণের সমস্যাসহ ত্বকের পরিপূর্ণ সুস্থতার ক্ষেত্রে সর্বদা হাইড্রেটেড থাকাটা কিন্তু বেশ জরুরি। যখন ত্বক শুষ্ক থাকে, তখন ত্বকের অবস্থা অনেক বেশি খিটখিটে, টানটান বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে আপনার হাইড্রেটেড থাকার অভ্যাস ব্রণের কারণে দেখা দেওয়া ঘা নিরাময় করবে। সাথে সাথে এটি নতুন ত্বকের কোষগুলির সঠিক বিকাশ নিশ্চিতেও সাহায্য করবে।
বয়স, এক্টিভিটি এবং তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে নিয়মিত পানি পান করুন। যথেষ্ট পরিমাণে পানি করলে ত্বকের পাশাপাশি শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারবেন।
৫. টেনশন-ফ্রি থাকুন
সবসময় টেনশন করলে ব্রণের সমস্যা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি তা দ্বিগুণ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ এই অতিরিক্ত টেনশন করার প্রবণতা আমাদের মানবদেহে স্ট্রেস এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন চুলের ফলিকল এবং ছিদ্রগুলিতে থাকা তেলের গ্রন্থিগুলিকে আরো বেশি এক্টিভ করে তোলে। যা পরবর্তীতে ব্রণের ঝুঁকি বাড়ায়।
সুতরাং ব্রণ তাড়াতে টেনশন-ফ্রি থাকুন এবং এক্ষেত্রে নিজেকে মেন্টালি ভালো রাখতে নিচের টিপসগুলি ফলো করুন:
পরিবার, বন্ধুবান্ধবসহ পরিচিতজনদের সাথে সময় কাটান
বেশি বেশি নিজের কাজে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করুন
মাঝেমধ্যে নিজের সাথে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করুন
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে পারছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন
স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য গ্রহণের দিকে বাড়তি ফোকাস করুন
নিজেকে ফিট রাখতে এবং টেনশনকে ঘেঁষতে না দেওয়ার উপায় হিসাবে নিয়মিত ব্যায়াম করুন
অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবারকে না বলুন
ইতি কথা
আশা করি ব্রণ হওয়ার কারণ কি এবং ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায় হিসাবে উপরোক্ত গাইডলাইনটি ফলো করলে সহজেই ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তবুও যদি ব্রণের সমস্যা আপনাকে ছুটি না দেয় সেক্ষেত্রে ভালো কোনো স্কিন কেয়ার ডাক্টারের পরামর্শ নিন। ত্বকের যত্ন নিন এবং সুন্দর থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ