মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা নেলসন ম্যান্ডেলার আজ দশম মৃত্যুবার্ষিকী

Nelson Mandela Bangla news


আজ ৫ ডিসেম্বর আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন। আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। এই বর্ণবাদের শুরুটা হয়েছিল সাড়ে ৩০০ বছর আগে।

শুরুটা হয়েছিল বোডিং স্কুল শেষ, দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ফোর্ট হেয়ারে ভর্তির পর। সেখান থেকে কর্তপক্ষ বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে। জন্মগত ভাবে কাল হওয়ায় তাদের সহ্য করতে অমানুষিক নির্যাতন। মানুষের হয়েও পশুর চেয়ে কঠিন জীবন তাদের কাটাতে হতো। নেলসন ম্যান্ডেলা তাদের জন্য নিজের টগবগে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। নেলসন ম্যান্ডেলার এই আত্মত্যাগের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ ম্যান্ডেলাকে আদর করে ডাকতেন মাদিবা বলে বা জাতির জনক

অবিসংবাদিত এই নেতার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ ই জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার এম্ভেজে গ্রামে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণে তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ নেতৃত্বাধীন সরকার তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। নেলসন ম্যান্ডেলার ২৭ বছর কারাজীবনে ১৮ বছর কাটাতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রোবেন দ্বীপের কারাগারে।

যুবক বয়সে নেলসন ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি জড়িয়ে পড়েন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে। শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের উপর ১৯৬০ সালে পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে উঠে। শান্তিপূর্ণ ভাবে আর কখনো আন্দোলন হবে কি না এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সেই সময়ে নেলসন ম্যান্ডেলা এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র ও প্রতিরোধবিহীন মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে, তখন তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ভাবে আচরণ করার কথা বলা নিস্ফল। এএনসি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নেলসন ম্যান্ডেলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই বিচারে নেলসন ম্যান্ডেলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নেলসন ম্যান্ডেলাকে কাটাতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রুবেল দ্বীপে দীর্ঘ কারাজীবন।

নেলসন ম্যান্ডেলাকে কারাবন্দী করলেও বর্ণবাদবিরোদী আন্দোলন চলতে থাকে। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু বরন করে হাজার হাজার কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ। নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে আফ্রিকার সরকারের উপর। অবশেষে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী, দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পান নেলসন ম্যান্ডেলা। এর পর শুরু হয় পুরোনো দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভুলে নতুন আফ্রিকা গড়ে তোলার কাজ। অতিতের সব দুঃখ ভুলে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে শেতাঙ্গ নিপীড়নদের দিকে বাড়িয়ে দেয় বন্ধুত্বের হাত।

নেলসন ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস তথা এএনসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালে ক্ষমতায় আসেন। সেই সময় সারাবিশ্বের কাছে হয়েছিল ভালোবাসায় সিক্ত। এরপর থেকে বিভিন্ন কল্যামমূলক কাজে সারাবিশ্বে নেলসন ম্যান্ডেলার ডাক পড়ে। শেষ জীবনে তিনি বেশির ভাগ দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং এইডস নিরাময়ের লক্ষ্যে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।

২০১৩ সালের ৮ জুন ফুসফুস সংক্রমণের জন্য দুইমাস হসপিটালে কাটান তিনি। ২১ সেপ্টেম্বর হসপিটাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই বছরের ৫ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরন করেন এই মহান সংগ্রামী।

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন