মাত্র 10 হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা করুন। প্রতি মাসে আয় 50 হাজার। শুরু করুন লাভের ব্যবসা!

সামান্য টাকা বিনিয়োগ করে লাভজনক ব্যবসা করা যায়। বর্তমান সময়ে মাত্র দশ হাজার টাকা দিয়ে নতুন একটি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। শুনতে অবাক লাগছে! ১০,০০০ টাকা দিয়ে আজকের দিনে ব্যবসা আদো কী সম্ভব? হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব। কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন? কোথায় মালামাল পাবেন? কতো দামে কিনবেন? কতো দামে বিক্রি করবেন? কিংবা ব্যবসায় লাভ কেমন? লস কেমন? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা। দশ হাজার টাকা দিয়ে কীভাবে নতুন একটি ব্যবসা শুরু করবেন? সেবিষয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যবসার আইডিয়া এখানে রয়েছে :


মাত্র 10 হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা করুন। প্রতি মাসে আয় হবে 50 হাজার টাকা। এখনি শুরু করুন এই দুর্দান্ত ব্যবসা!

ব্যবসার আইডিয়া কি?


ব্যবসার আইডিয়া হলো একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যবসার আইডিয়া বের করা। যেহেতু আমাদের বাজেট সীমিত, এজন্য (দশ হাজার টাকা) এর মধ্যে এমন একটি business আইডিয়া বের করতে হবে যে পন্যের চাহিদা সবসময় থাকে। এখানে business idea হিসেবে জুতার ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। জুতার ব্যবসা মাত্র ১০,০০০ টাকা দিয়ে শুরু করা সম্ভব।


ভাবছেন, আপনাকে দিয়ে জুতার ব্যবসা হবেনা, তাহলে আপনি বাজারে চা বিস্কিটের দোকান দিতে পারেন। অথবা ঝালমুড়ি পিঠা পুলির ব্যবসা করতে পারেন। যাইহোক, আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী ব্যবসার আইডিয়া বেছে নিবেন। তবে সীমিত বাজেটের মধ্যে চা বিস্কুট বিক্রি করে দৈনিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করা কোনো ব্যাপার না। দোকানের পজিশন ভালো হলে আরও বেশি টাকা আয় করা সম্ভব।


কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন?


দশ হাজার টাকা দিয়ে কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন সেবিষয়ে উপরে কিছু ব্যবসার আইডিয়া রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে কীভাবে ব্যবসাটা শুরু করবেন। ব্যবসা শুরু করার জন্য অনেকগুলি পদক্ষেপ রয়েছে যেমন: কি ব্যবসা করবেন? ব্যবসা কোথায় করবেন? বা কাদের কাছে ব্যবসার মালামাল সেল করবেন? কোথা থেকে মালামাল সংগ্রহ করবেন? ব্যবসার নাম কি হবে? ইত্যাদি। 


কি ব্যবসা করবেন?


কি ব্যবসা করবেন তা সঠিক ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখবেন, যে পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেই পণ্য নিয়ে ব্যবসা করলে কখনো লস হয়না। এজন্য ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে আমরা জুতার ব্যবসা বেছে নিয়েছি। কারণ জুতা মানুষের দৈনিক পথ চলার সাথী। যা অতন্ত্য প্রয়োজনীয় এবং বাজারে এর চাহিদা অনেক। 


ব্যবসা কোথায় করবেন?


ব্যবসা কোথায় করবেন এবিষয়ে যত ভালো উপায় বের করতে পারবেন তত বেশি ব্যবসায় মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। যেহেতু আমাদের বাজেট মাত্র (দশ হাজার) টাকা। সেহেতু মার্কেট বা বাজারে দোকান দেয়া সম্ভব না। বাজারে একটি দোকান করতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন এজন্য আমাদের ভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হবে। এতো কম টাকায় আমরা কোথায় ব্যবসা করতে পারি এবিষয়ে ২টি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। 


১) বাজারে ঘুরলে দেখতে পাবেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী আছেন যারা বিভিন্ন পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে জুতা এনে দোকানে বিক্রি করে। আপনি সেসব ব্যাবসায়ীদের কাছে গিয়ে আপনার জুতার সিম্পল দেখিয়ে অর্ডার নিতে পারেন। পাইকারি হিসেবে জুতা সেল বা বিক্রি করতে পারেন।


২) উপরের উপায় যদি আপনার কাছে কঠিন মনে হয় তবে আপনি নিজে ভ্যান গাড়িতে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে জুতা সেল বা বিক্রি করতে পারেন।

 

কোথা মালামাল থেকে সংগ্রহ করবেন?


শুধু জুতা ব্যবসার ক্ষেত্রেই নয় বরং সব ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এটি। কোথা থেকে ব্যবসার জন্য মালামাল সংগ্রহ করবেন। আপনি যদি এলাকার পাইকারি জুতা দোকান থেকে জুতা সংগ্রহ করেন তবে, ১নং পয়েন্ট অনুযায়ী বাজারে খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছে সিম্পল দেখিয়ে জুতার সেল বা অর্ডার নিতে পারবেন না। এর কারণ আর একটু নিচে পড়লে বুঝবেন আশাকরি। তবে ২নং পয়েন্ট অনুযায়ী ভ্যান গাড়িতে করে গ্রামে জুতা সেল করতে পারবেন। এতে লাভের পরিমাণ কম হবে।


আপনি যদি শহর থেকে জুতার মালামাল সংগ্রহ / পাইকারি কিনতে পারেন সেক্ষেত্রে খুচরা ব্যাবসায়ীদের থেকে অর্ডার নিতে পারবেন। পাশাপাশি ভ্যান গাড়িতে করে জুতা গ্রামে সেল করতে পারবেন। এতে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি হবে। শহর থেকে জুতা সংগ্রহ করলে নতুন কালেকশন এবং নতুন ডিজাইন পাবেন। আর এলাকার পাইকারি দোকানে থেকে নতুন ডিজাইনের কালেকশন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। তাছাড়া শহর থেকে এলাকার দোকানে দামটাও বেশি। এজন্য জুতা সংগ্রহের বেলায় শহর সেরা।


ব্যবসার নাম কি হবে?


ব্যবসার জন্য নাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নাম পরিচয় বহন করে আর ব্যবসার ক্ষেত্রে নাম ব্রান্ড হিসেবে কাজ করে। ছোটো থেকে যখন বড়ো ব্যবসায়ী হয়ে উঠবেন তখন পরিচিতির উপরে ভিত্তি করে অর্ধেক সেল বেশি হবে। এজন্যে ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি ইউনিক নাম বাছাই করা অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। 

ব্যবসায় কত টাকা আয় করা সম্ভব?


যেকোনো একটি নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে সবার আগে পরিচিতি অর্জন করতে হয়। তারপর ধিরে ধিরে ব্যবসায় আয় বাড়ে। কিন্তু জুতার ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যা পরিচিতি হওয়া ছাড়াই অনেক বেশি আয় করা সহজ। আপনি ১০ হাজার টাকা দিয়ে জুতার ব্যবসা করলে মাসে অতন্ত্য ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।


দৈনিক ২ হাজার টাকা আয় করার উপায়! 


জুতার ব্যবসা থেকে দৈনিক ২ হাজার টাকা আয় করা কোনো ব্যাপার না। ব্যবসার উপায় জানা থাকলে আরো বেশি আয় করা সম্ভব। আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, বাজারে ফুটপাতের উপর দিয়ে মানুষের চলাচল বেশি থাকে। আপনি যদি ফুটপাতে জুতার দোকান নিয়ে বসতে পারেন তবে বেচাকেনা দ্বীগুন হবে। আর আপনি যদি দিনে ৫০ জোড়া স্যান্ডেল জুতা বিক্রি করতে পারেন তবে ২০০০ টাকা আয় অনায়াসে হয়ে যাবে। 


আপনি যদি আরো বেশি আয় করতে চান তবে গ্রামের এলাকায় ঘুরে ঘুরে স্যান্ডেল জুতা বিক্রি করতে পারেন। আপনি যদি দৈনিক ৫ থেকে ৭ টি এলাকায় ঘুরতে পারেন কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০ জোড়া স্যান্ডেল জুতা বিক্রি করা সম্ভব। ১০০ জোড়া জুতা বিক্রি করলে আয়ের পরিমাণ ৩৫০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। 


কোন জুতা নিয়ে ব্যবসা করলে সবচেয়ে বেশি লাভ করা যায়?


গ্রাম অঞ্চলের তিন ধরনের জুতার চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। ১) পন্স স্যান্ডেল। ২) চটি স্যান্ডেল। ৩) বার্মিজ স্যান্ডেল। ১০,০০০ হাজার টাকা তহবিল দিয়ে এই ৩টি পদের স্যান্ডেল ব্যবসা অনেক ভালো হবে। তাছাড়া গ্রামের মানুষ এই তিন ধরনের জুতা পড়তে অনেক বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এজন্য পন্স,চটি এবং বার্মিজ নিয়ে ব্যবসা করতে পারলে গ্রামে সবচেয়ে বেশি লাভ করা সম্ভব।


পন্স স্যান্ডেলের পাইকারি দাম কত?


পন্স স্যান্ডেল সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আপনি আপনার জুতার ব্যবসার জন্য পাইকারি বাজার হতে ১০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে যে পন্স স্যান্ডেলগুলি পাওয়ার যায় সেগুলো ক্রয় করবেন। ১০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে বাচ্চাদের জন্য ভালো ভালো পন্স স্যান্ডেল পাওয়া যায়। আর বড়োদের জন্য ২০ থেকে ৬০ টাকায় ভালো ভালো পন্স স্যান্ডেল পাওয়া যায়।


পন্স স্যান্ডেল থেকে লাভ কেমন হয়?


পন্স স্যান্ডেল থেকে জোড়া প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ করা সম্ভব। আর পাইকারি অর্ডার নিয়ে বিক্রি করলে ৩ থেকে ৫ টাকা লাভ করা সম্ভব। ১০ টাকার পন্স স্যান্ডেল ৩০ থেকে ৪০ টাকায় খুচরা বিক্রি করা যায়। এবং ২৫ থেকে ৬০ টাকার পন্স স্যান্ডেল গুলি ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা যায়।


চটি স্যান্ডেলের পাইকারি দাম কত?


পাইকারি বাজারে চটি স্যান্ডেল সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আপনি আপনার চটি জুতার ব্যবসার জন্য পাইকারি বাজার থেকে ৩০ - ৭০ টাকার মধ্যে যে চটি স্যান্ডেলগুলি পাওয়ার যায় সেগুলো ক্রয় করবেন। ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বাচ্চাদের জন্য ভালো ভালো পন্স স্যান্ডেল পাওয়া যায়। এবং বড়োদের জন্যে ৩০ থেকে ৭০ টাকায় ভালো চটি স্যান্ডেল পাওয়া যায়।


চটি স্যান্ডেল থেকে লাভ কেমন হয়?


পন্স স্যান্ডেল মতোই চটি স্যান্ডেল প্রতি জোড়া থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা লাভ করা সম্ভব। আর পাইকারি অর্ডার নিয়ে বিক্রি করলে ৫ থেকে ৭ টাকা লাভ করা সম্ভব। খুচরা বিক্রি করে ৩০ টাকার চটি স্যান্ডেল থেকে ৪০ টাকা এবং ৭০ টাকার চটি হতে ৫০ লাভ করা সম্ভব।


বার্মিজ স্যান্ডেলের পাইকারি দাম কত?


পাইকারি বাজারে ভালো বার্মিজ স্যান্ডেলের সর্বনিম্ন দাম ৪৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আপনি বার্মিজ জুতার কেনার ক্ষেত্রে চায়না, ইন্ডিয়ান এবং বাংলা মিক্স করে বার্মিজ স্যান্ডেল কিনতে পারেন। আমাদের দেশে চায়না বার্মিজ জুতার চাহিদা বেশি। ৩০ টাকার মধ্যে বাংলা বার্মিজ, ৪০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে ইন্ডিয়ান বার্মিজ এবং ৭০ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে চায়না বার্মিজ স্যান্ডেলগুলি পাওয়ার যায় সেগুলো ক্রয় করবেন।


বার্মিজ স্যান্ডেল থেকে লাভ কেমন হয়?


পন্স এবং চটি স্যান্ডেল থেকে বার্মিজ স্যান্ডেলে জোড়া প্রতি সামান্য বেশি লাভ করা যায়। ৩০টাকার বাংলা বার্মিজ পাইকারি অর্ডারে ৫টাকা। চায়না এবং ইন্ডিয়ান বার্মিজ থেকে ৮ থেকে ১০ টাকা। ৩০ টাকার বাংলা বার্মিজ থেকে খুচরা বিক্রিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা আয় করা সম্ভব। আর ইন্ডিয়ান এবং চায়না বার্মিজ স্যান্ডেল থেকে ৭০ থেকে ১২০ টাকা আয় করা সম্ভব।


পাইকারি দোকান কোথা আছে?


জুতা ব্যবসার জন্য সবচেয়ে ভালো পাইকারি দোকানগুলি গুলিস্তানের আসেপাশে পেয়ে যাবেন। জুতার ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বিক্ষাত পাইকারি বাজা হলো বঙ্গ মার্কেট, সিদ্দিক বাজার, জুরাইন, আলম নগর, সদরঘাট এবং গুলিস্তান।


পরিশেষে বলতে চাই ব্যবসা করতে হলে টাকার চেয়ে বেশি বুদ্ধি প্রয়োজন। যে ব্যবসা করবেন সেই ব্যবসা সমন্ধে ভালো ভাবে গবেষণা করা দরকার। শুধু আইডিয়া তৈরি করলে হবেনা। আইডিয়া পরিক্ষা করতে হবে, এবং সময় সুযোগে কাজে লাগাতে হবে। আপনি বেকার বসে না থেকে দশ হাজার টাকা দিয়ে জুতার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। নতুন অবস্থায় দিনে ১০০০ হাজার টাকা আয় করা জুতার ব্যবসা দিয়ে সম্ভব। ধিরে ধিরে বিদ্যা বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসার পরিসর আরো বড়ো করতে পারবেন। বসে না থেকে কাজে লেগে থাকুন সফলতা অর্জন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন