বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি: কে এই ইলন মাস্ক rich man in the world : Who is elon Musk

rich man in the world : Who is elon Musk, bangla news

কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে হতে পারেন? টাকার দৌঁড়ে বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে কে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তরে বলতে হয় "ইলন মাস্ক" এর নাম। 


বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলে ইলন মাস্ক। চলুন তবে ইলন মাস্ক সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য জানার পাশাপাশি বিশের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিদের নিয়েও ভিন্নধর্মী আলোচনায় যাওয়া যাক। 


বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের পরিচয় 

দক্ষিণ আফ্রিকার এক বাবার এবং কানাডার এক মায়ের সন্তান ছিলেন এই মাস্ক। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার এবং উদ্যোক্তাদের নিয়েই তিনি সবচেয়ে বেশি ভাবতে পছন্দ করতেন। 


মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি একটি ভিডিও গেম তৈরি করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এটি একটি কম্পিউটার ম্যাগাজিনে বিক্রিও করে দিয়েছিলেন। 


১৯৮৮ সালের দিকে কানাডিয়ান পাসপোর্ট পাওয়ার পর, ইলন মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে চলে যান। এর কারণে ছিলো তিনি সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বাধ্যতামূলক মিলিটারি সার্ভিস সাপোর্ট করতেন না এবং এই সার্ভিস প্রদানেও অতটা ইচ্ছুক ছিলেন না। 


অন্যদিকে তার ঝোঁক ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল অর্থনৈতিক সুযোগের দিকে। তিনি এই দিকটাতে ফোকাস করে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতেই আজ তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তির কাতারে প্রথম দিকের স্থানটিই দখল করেছেন। 


ইলন মাস্কের শিক্ষা জীবন এবং ক্যারিয়ার

এবার আমি ইলন মাস্কের শিক্ষা জীবন এবং ক্যারিয়ার সম্পর্কে। যা সম্পর্কে আলোচনা না করলে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের পরিচয় পরিপূর্ণ হবে না। 


ইলন মাস্ক অন্টারিওর কিংস্টনে কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার করার পর ১৯৯২ সালে ফিলাডেলফিয়ার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সফার হোন। 


এছাড়াও তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামিস্ট্রি বিভাগে ভর্তি হোন। কিন্তু পড়াশোনার মাঝেই সেখান থেকে পালিয়ে যান। কারণ ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলটিতে ভর্তি হওয়ার মাত্র দুই দিন পরে তিনি বুঝতে পেরেছেন পদার্থবিদ হওয়ার চাইতে সমাজের জন্য কাজ করাটা অনেক সহজ। 


১৯৯৫ সালের দিকে এসে বেশ অল্প বয়সেই তিনি Zip2 প্রতিষ্ঠা করেন। ইলন মাস্কের তৈরি করা এই Zip2 প্রতিষ্ঠান হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা অনলাইন মিডিয়া বা নিউজ মিডিয়াগুলিতে মানচিত্র এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরির ব্যবসার ডিরেক্টরি প্রদান করে থাকে। 


প্রায় ৪ বছর পর অর্থ্যাৎ ১৯৯৯ সালে এই Zip2 প্রতিষ্ঠার কম্পিউটার নির্মাতা কমপ্যাক ৩০৭ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। 


ইলন মাস্কের X.com থেকে পেপ্যাল 

ইলন মাস্কের নিজের ব্রেইন কথা শুনতে গিয়ে এবার তৈরি করে বসে X.com প্রতিষ্ঠান। যার মূলত ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নিয়ে কাজ করতো। আপনি জেনে অবাক হবেন এই X.com প্রতিষ্ঠানটিই বর্তমানে পেপ্যাল নামে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। 


পরবর্তীতে ২০০২ সালের দিকে এসে ইবে কোম্পানি ১.৫ বিলিয়ন ডলারে এই পেপ্যালকে ইলন মাস্কের কাছ থেকে কিনে নেয়। 


ইলন মাস্কের স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস বা স্পেসএক্স

এতো এতো ব্র্যান্ড বা কোম্পানি দাঁড় করানোর পরও ইলন মাস্ক ক্ষান্ত হননি। তিনি স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস বা স্পেসএক্স কোম্পানি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন৷ মূলত বিশ্বের সমসাময়িক রকেট লঞ্চারদের ছোটখাটো বাজেটে তিনি বেশ অসন্তোষ ছিলেন। 


তার এই অসন্তোষ মনোভাবের কারণে ২০০২ সালে তারই খরচে সাশ্রয়ী মূল্যের রকেট তৈরি করার কোম্পানি স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস বা স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠিত হয়। 


মাস্কের বেশকিছু রকেট কিন্তু ইতিমধ্যেই নিক্ষেপণ করা হয়েছে। তার প্রথম রকেট ২০০৬ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়। যার ফ্যালকন ওয়ান নামে বেশ সুপরিচিত। অন্যদিকে সবচেয়ে বড় রকেট ফ্যালকন নাইন উৎক্ষেপণ করা হয় ২০১০ সালে। 


এছাড়াও ফ্যালকন হেভি নামের একটি রকেটও ২০১৮ সালের দিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। মাত্র এক তৃতীয়াংশ খরচে বোয়িং কোম্পানির ডেল্টা IV হেভির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভারী হওয়ায় ফ্যালকন হেভি রীতিমতো রকেটদুনিয়ায় তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো। 


বলা হয়ে থাকে দ্রুত পরিবহন করার ক্ষমতা কেবলমাত্র পৃথিবীর এই রকেটটিতেই রয়েছে। যা মূলত তৈরি করা হয়েছিলো চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে ঘাঁটি নির্মাণের জন্য। 


ইলন মাস্কের টেসলা

মাস্ক দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি ঝোঁক দিচ্ছিলেন। যার প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে তিনি টেসলা মোটরসের অন্যতম ইনভেস্টর হয়ে উঠেন। বলে রাখা ভালো শুরুতে কোম্পানিটির নাম টেসলা মোটরস হলেও পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় শুধু টেসলা নামে। 


মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টারপেনিং দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই টেসলার সাথেও মাস্কের নাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। 


ইলন মাস্ক কিভাবে বড়লোক হলেন? 

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে ইলন মাস্ক সম্পর্কে জানতে গিয়ে আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে, "ইলন মাস্ক কিভাবে এতো বড়লোক হলেন, কোন ম্যাজিকের সাহায্য নিয়ে তিনি পৃথিবীর ১ নম্বর ধনী হলেন"। চলুন তবে আর্টিকেলের এই অংশ বিষয়টি নিয়ে খানিকটা আলোকপাত করি। 


ইলন মাস্কের বড়লোক হবার এই জার্নি অনেক আগে থেকেই শুরু হলেও ২০২০ সাল ছিলো তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট। আর টেসলা ছিলো তার জন্য ম্যাজিকাল ডোরের মতো। যার কারণে সবকিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। 

 

তাছাড়া শ্রেষ্ঠ ধনীদের তালিকায় তিনি অ্যামাজন সিইও জেফ বেজোস এবং ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গের অনেক পরে থাকলেও টেসলায় জয়েন হওয়ার পরও তিনি হয়ে উঠেন ১ নাম্বার। 


সুতরাং বলাই যায় ইলন মাস্ক দ্রুত বড়লোক হয়ে উঠতে পেরেছিলেন কেবলমাত্র টেসলায় জয়েনিংয়ের পর। 


ইলন মাস্ক কেন বিখ্যাত?

ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিগত খাতে ইনভেস্ট করে বেশ অল্প সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিতে রূপান্তরিত হবার কারণেই মূলত বর্তমানে ইলন মাস্ক বেশ বিখ্যাত হয়ে আছেন। 


একজন টিনেজারের পক্ষে কিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোক্তা থেকে স্পেসএক্স এবং টেসলার মতো বিভিন্ন উদ্ভাবনী সংস্থার সিইও হয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে তার হিসাব মেলাতে মেলাতে তিনি সকলের রিসার্চের কারণ হয়ে উঠেছেন, হয়ে উঠেছেন জনপ্রিয়। 


কল্পনাপ্রবণ চিন্তাভাবনা এবং নিরলস ড্রাইভ বা লেগের থাকার মন-মানসিকতাই তাকে এতোদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাছাড়া তার আধুনিক চিন্তাভাবনা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক সুযোগকে কাজে লাগানোর বিষয়কে অনেকেই বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে করেন। 


মাস্ক এই চ্যালেঞ্জের বিষয়টিকে কিভাবে কাটিয়ে উঠেছেন, কোন কোন ট্রিকস ফলো করেছেন এসমস্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে জানতেই তার প্রতি পুরো পৃথিবীর আগ্রহ বেড়েছে এবং তিনি হয়ে উঠেছেন বেশ জনপ্রিয়।  


ইলন মাস্ক কত টাকার মালিক? 

আপন কি জানেন ইলন মাস্ক বর্তমানে কত টাকার মালিক? সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুলাই মাসের রিসার্চ অনুসারে মাস্কের ২৫৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সম্পদ রয়েছে। 


তাছাড়া জুলাই মাসের দিকেই মাস্ক তার সর্বশেষ স্টার্টআপ ঘোষণা করায় পরবর্তী বছরের হিসেবে-নিকেশে হয়তো এই অর্থের পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে। যাইহোক! তার এই নতুন স্টার্টআপের নাম হলো xAI। আর এটি এমন একটি কোম্পানি যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে। 


এছাড়া টেসলার ১৩% এবং টুইটারের ৭৯% মালিকানা তো মাস্কের দখলে রয়েছেই! ২০২২ সালে যেখানে টেসলার মোট আয় ছিলো ৮১.৪৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে মাস্কের ১৩% মালিকানার মূল্যই ছিলো ১০৪ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কি বিশাল ব্যাপার! 


বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কারা?

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি হলেন ৫১ বছর বয়সী ইলন মাস্ক। যাকে নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এবারে চলুন মাস্কের পরে বিশ্বের ধনী ব্যাক্তির তালিকায় থাকা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাক। 


বার্নার্ড আর্নল্ট

বার্নার্ড আর্নল্টের বয়স ৭৪ বছর এবং তার অর্থ সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ১৭৩ বিলিয়ন ডলার। ফ্রান্সের এই নাগরিক বর্তমানে বসবাস করছেন প্যারিসে। 


আপনি জেনে অবাক হবেন এই ব্যাক্তি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড Moet Hennessy Louis Vuitton বা LVMH এর বর্তমান সিইও। এছাড়াও Tiffany & Co. কোম্পানিতে তার শেয়ার আছে। 


জেফ বেজোস

অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোসের বর্তমান বয়স ৫৯ বছর। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫২ বিলিয়ন ডলার। মূলত ইকমার্স পাওয়ার হাউস অ্যামাজনের সিইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করার কারণেই হয়তো তিনিও আজ বিশ্বের ধনী ব্যাক্তিগণের একজন হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। 


এছাড়াও জেফ দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ব্লু অরিজিন নামে একটি মহাকাশ সংস্থার মালিকও ছিলেন। পাশাপাশি তিনি এককালে ভালো রকেট ডিজাইনিংও করতেন।


ল্যারি এলিসন

ল্যারি এলিসনের বয়স ৭৪ বছর এবং তার দখলে আছে ১৩৭ বিলিয়নের মতো সম্পদ এবং অর্থ। বর্তমানে রিয়েল-টাইম বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় এই ল্যারি এলিসন চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। 


বর্তমানে তিনি সফটওয়্যার জায়ান্ট ওরাকলের ৩৫% মালিক, এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি স্থায়ীভাবে হাওয়াইয়ান দ্বীপ লানাই কিনে নিয়েছেন এবং ৩ মিলিয়ন ডলারের শেয়ার কিনেছেন টেসলা থেকে। 


ইতি কথা

মূলত বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে হবেন তা নির্ধারণ করা হয় কোনো ব্যাক্তির নেট সম্পদের পরিমাণ এবং লোনের হিসাব করে। নগদ অর্থ, রিয়েল এস্টেট, ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তিসহ সবকিছু হিসাব করেই এই ঘোষণা দেয় ফোর্বস। আর এদিকটা বিবেচনা করেই ইলন মাস্ক এই বছরের সেরা বিলিয়নিয়ারের স্বীকৃতি পেয়েছেন।

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন